কাশীর দেবী ব্রহ্মচারিণী মন্দির

এই চৈত্র মাসে বাসন্তী পুজোর রীতি বাংলায় আগেই ছিল। কিন্তু বাবু কুলের আয়োজনে আর দেখনদারি প্রতিস্পর্ধায় শারদীয়া পুজোর চলন ঘটেছে । বাবু কুলের প্রভাব কাশী তে পড়ে নি তাই সনাতন রীতি বজায় আছে। নবদুর্গার দ্বিতীয় রূপ দেবী ব্রহ্মচারিণী। ব্রহ্ম হল তপস্যার একটি স্তর। ব্রহ্মচারিণী সেই অর্থে তপস্যাকারী বা তপশ্চারিণী। তার বাসস্থান স্বাধিষ্ঠান চক্রে। ‘ব্রহ্মচারিণী’ নামের অর্থ ‘ব্রহ্মচর্য ব্রত অবলম্বনকারিণী’ বা পালনকারিণী। দেবীর রূপ বলতে, তিনি দ্বিভুজা কিন্তু, ত্রিনয়নী। তাঁর পরনে সাদা শাড়ি ও ফুলের অলঙ্কার। এক হাতে কমণ্ডলু। দেবীর অন্য হাতে জপমালা। তন্ত্রমতে দেবী ব্রহ্মচারিণী ব্রহ্মের প্রতিনিধি রূপে দেবতাদের দর্পও চূর্ণ করেছিলেন। দেবীর ভৈরবের নাম চন্দ্রমৌলীশ্বর। দেবীপুরাণ অনুযায়ী, তিনি সর্ববেদে বিচরণ করেন। আর, সেই কারণেই দেবী পার্বতীরই অপর নাম ‘ব্রহ্মচারিণী’।
এক সময় স্বর্গে তর্কসুর অসুরের দাপট, যাকে কেবল শিবের সন্তানই হত্যা করতে পারে।এদিকে কুমারী পার্বতী শিবকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । তার বাবা-মা তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করে, কিন্তু সে অবিচল। দেবতারা কামদেবের কাছে আসেন এবং তাকে পার্বতীর জন্য শিবের মনে আকাঙ্ক্ষা নির্মিত করতে বলেন। কামদেব শিবকে কামনার তীর নিক্ষেপ করেন।শিব নিজের তৃতীয় চোখ খুলে কামকে পুড়িয়ে ছাই করে দেন।
পার্বতী শিবের আশা বা তার সংকল্প হারান না। তিনি শিবের মতো পাহাড়ে বাস করে তপস্যায় নিযুক্ত হন। পার্বতীর এই রুপ কেই দেবী ব্রহ্মচারিণী বলে মনে করা হয়। তার তপস্বী সাধনা শিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তার আগ্রহ জাগ্রত করে। তিনি ছদ্মবেশে তার সাথে দেখা করেন এবং শিবের দুর্বলতা এবং ব্যক্তিত্বের সমস্যাগুলি গণনা করে তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন।পার্বতী শুনতে অস্বীকার করেন এবং তার সংকল্পে জোর দেন।
এই সময় প্রকণ্ডসুর নামক অসুর তার লক্ষাধিক অসুর নিয়ে পার্বতীকে আক্রমণ করে। পার্বতী তার তাপস শেষ করার শেষ পর্যায়ে, এবং নিজেকে রক্ষা করতে অক্ষম। পার্বতীকে অসহায় দেখে, দেবী লক্ষ্মী এবং সরস্বতী হস্তক্ষেপ করেন কিন্তু রাক্ষসদের দ্বারা সংখ্যায় বেশি। অনেক দিন যুদ্ধের পর পার্বতীর পাশের কমণ্ডলু পড়ে যায় এবং বন্যায় সমস্ত রাক্ষস ভেসে যায়। অবশেষে, পার্বতী তার চোখ খুলে দেয়, আগুন নির্গত করে এবং রাক্ষসকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
শিব ছাড়া দেবী পার্বতীর দ্বারা সম্পাদিত তাপস মহাবিশ্বের সকলেই মুগ্ধ। শিব শেষ পর্যন্ত ভ্রমচারীর ছদ্মবেশে দেবী কে দেখতে যান। পার্বতীকে তার ধাঁধা দিয়ে পরীক্ষা করেন, যার উত্তর দেবী সঠিকভাবে দেন। পার্বতীকে তার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক এবং সৌন্দর্যের জন্য প্রশংসা করার পর, ব্রহ্মচারী হওয়ার প্রস্তাব দেন। পার্বতী উপলব্ধি করেন যে এই ছদ্মবেশ ধারিই শিব এবং তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেন। শিব তার আসল রূপে আবির্ভূত হন এবং অবশেষে তাকে গ্রহণ করেন। দেবী নিজের তপস্যা ভেঙে দেন। তপস্যা চলাকালীন দেবী প্রবতী বেলপাতা ও নদীর জল দিয়ে পোষণ করেন।
চৈত্র নবরাত্রির শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে দেবী পার্বতীকে ব্রহ্মচারিণী রূপে পূজা করা হয় । দেবী ব্রহ্মচারিণী সাধককে ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। তাঁর পূজা করলে সংযম ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, সাধক অনন্ত পুণ্যফলও লাভ করে থাকেন। সাধক সর্বদা সিদ্ধি এবং বিজয় লাভ করে থাকেন দেবী ব্রহ্মচারিণীর আরাধনা করলে। নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে সাধক নিজের মনকে স্বাধিষ্ঠান চক্রে স্থির করে দেবী ব্রহ্মচারিণীর পূজা করেন। দেবীর জ্যোতির্ময়ী রূপের কথা আরাধনার সময় সাধক মনে কল্পনা করে থাকেন। 
ব্রহ্মচারিণী দেবীর মন্দির দুর্গাঘাটে জনবহুল মহারাষ্ট্রীয় ও নেপালি অধ্যুষিত পাড়ায় অবস্থিত। পুরোনো তিন তলা বাড়ির নিচের তলায় বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত। এই মন্দিরের ওপরে মানুষের বাস। মনে হয় মন্দির আগে ছিল, তার ওপর বাড়ি পরে হয়েছে। স্থানীয় লোকেরা একে ছোটো দুর্গাও বলেন। দেবীর মুখে সোনার মুখোশ রয়েছে। তাঁর প্রণামমন্ত্র— দিধানা করপদ্মাভ্যাম্ অক্ষমালা কমণ্ডলু।/ দেবী প্রসীদতু ময়ি ব্রহ্মচারিণ্যনুত্তমা।।’অর্থাৎ ‘জপমালা ও কমণ্ডলুধারিণী দেবী, অনুপমা ব্রহ্মচারিণী জননী, তুমি আমার প্রতি প্রসন্না হও।'

Comments

Popular posts from this blog

আচার্য ভরত প্রস্তাবিত অভিনয়রীতি

কাশীর বাঙালী টোলার দ্বীতিয় পাতালেশ্বর