Posts

Showing posts from April, 2024

কাশী বিশ্বনাথের আরেক রূপ নর্তক আত্মা

Image
কাশী বিশ্বনাথের আরেক রূপ নর্তক আত্মা কাশীর অধিষ্ঠাতা মহাদেব হলেন তাণ্ডব স্রষ্টা। তাণ্ডব শব্দটি কে সংবাদ পত্রে এমন ভাবে প্রচার করা হয়েছে, যে সে জন্য ভয়ঙ্কর কিছু। সমাজেও এই শব্দের মানে অন্য হয় দাঁড়িয়েছে।  ভারতীয় শিল্পের আকর গ্রন্থ ভারত মুনি প্রণীত "নাট্যশাস্ত্র"। এই গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রমন্থন নাটক নির্মাণের পর আচার্য সেই নাটক মহাদেব কে দেখানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন ব্রহ্মার কাছে। সেই নাটক দেখে শিব প্রীত হয়ে ব্রহ্মা কে বলেছিলেন - অহো নাট্যমিদং সমাক্ ত্বয়া সৃষ্টং মহামতে। যশস্যং চ শুভার্থং চ পুণ্যং বুদ্ধিবিবর্দ্ধনম্।। তার পর সন্ধ্যাকালে নৃত্য করতে করতে বিভিন্ন করণ' সম্বলিত অঙ্গহার' সমূহ দ্বারা শোভন এই নৃত্যের কথা আমি স্মরণ করলাম। এই পূর্বরঙ্গবিধিতে আপনি (একে) সমাক্ প্রয়োগ করুন। বর্ধমানক আসারিত, গীত' ও মহাগীতে বিষয়গুলি যথাযথরূপে অভিনয় করবেন। যে শুদ্ধ পূর্বরঙ্গের অনুষ্ঠান আপনি করেছেন তা এই (নৃত্য)-গুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে চিত্র নামে অভিহিত হবে। শিবের কথা শুনে ব্রহ্মা উত্তর দিলেন, হে দেববর, অঙ্গহার'সমূহের প্রয়োগ সম্বন্ধে বলুন। ত...

হনুমান জয়ন্তী, পবন পুত্রের দেবালয় ও সঙ্গীতাঞ্জলী, কাশী

Image
হনুমত জন্মোৎসব হল একটি সনাতন বৈদিক আর্শ মহাপর্ব। চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়। এই দিনটিকে হনুমানজির জন্ম বলে মনে করা হয়। শ্রী হনুমান মারুতি পুত্র। 'হনুমান' শব্দের 'হ' ব্রহ্মার সমার্থক, 'ন' অর্চনার সমার্থক, 'মা' লক্ষ্মীর সমার্থক এবং 'ন' বীরত্বের সমার্থক। হনুমত জয়ন্তী বছরে দুবার পালিত হয়, একটি চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এবং অন্যটি কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে। প্রথম চৈত্র শুক্ল পূর্ণিমা কার্তিক কৃষ্ণ চতুর্দশীতে পড়ছে এবং দ্বিতীয় চৈত্র শুক্লা পূর্ণিমা সকাল ২.২৭ মিনিটে পড়ছে, যা আগামী দিন ভোর ৪.১৫ পর্যন্ত থাকবে। তাই ২৩ এপ্রিল হনুমত জয়ন্তী পালিত হবে। মেষ রাশির রাশি সকাল ৬:৪৩ থেকে সকাল ৮:৩৯ পর্যন্ত। বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে স্বাতি নক্ষত্রে হনুমান জির জন্ম হয়েছিল। একই সঙ্গে চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হনুমান জয়ন্তী পালনের পেছনে একটি পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। শৈশবে একবার হনুমানের ক্ষুধা লাগলে তিনি সূর্যকে ফল ভেবে খেতে ধেয়ে যান। সূর্যকে গ্রাস করার চেষ্টা করেন, যার ফলে পৃথিবীতে অন...

কাশীর বাসন্তী পুজো

Image
কাশীতে বর্তমানে তীর্থ যাত্রী থেকে পর্যটকের আনাগোনা বেশি। মুঠোফোনে সেলফির হিড়িক চতুর্দিক। কিন্তু মজার ব্যাপার মানুষ বদল হলেও দৃশ্যপট এক। তাহলে কি কাশীতে কেবল ওই গোটা কয়েক স্থান অথবা মন্দির আছে! না না, তা মোটেই নয়।  আজ বলবো চন্দ্রঘণ্টা দেবী মন্দির এবং রানী ভবানীর দ্বারা পুনর্নির্মিত মা দুর্গা মন্দিরের কথা। “পিণ্ডজ প্রবরারূঢ়া চণ্ডকোপাস্ত্ৰকৈতা।/প্রসাদং তনুতে মহং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা। অর্থ— “দেবী ব্যাঘ্রবাহনা, রক্তবস্ত্র-পরিহিতা, সুবর্ণবর্ণা, নানা অলংকার শোভিতা, দশভুজা, দশপ্রহরণধারিণীতার অন্যতম একটি ঘণ্টা। প্রচণ্ড বিক্রম এই ঘণ্টাধ্বনির। এর শব্দেই অসুরসৈন্যেরা নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল।” চন্দ্রঘণ্টা দেবীর মন্দির চৌক থানার ঠিক বিপরীতে চন্দু নাউ (নাপিত)-এর গলি, সি.কে ২৩/৩৪ নম্বর বাড়ি। প্রাচীন এই দেবীর প্রতিমা পাথরের প্রায় ফুটখানেকের মতো। ডক্টর তপন কুমার ঘোষ মহাশয় বলেন, দেবীর সম্বন্ধে কথিত যে ইনি বৌদ্ধদেবী চিত্রঘণ্টা এবং এই প্রতিমা সারনাথ থেকে এখানে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই সম্বন্ধে সারনাথ প্রাপ্ত স্থিরপাল এবং বসন্ত পালের ১০২৬ খৃঃ শিলালেখ উল্লেখযোগ্য। বাংলার সম্রাট গৌড়াধিপ মহীপালের...

কাশীর নবরাত্রি : তৃতীয় ও চতুর্থ দিবস

Image
“পিণ্ডজ প্রবরারূঢ়া চণ্ডকোপাস্ত্ৰকৈতা।/প্রসাদং তনুতে মহং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা। অর্থ— “দেবী ব্যাঘ্রবাহনা, রক্তবস্ত্র-পরিহিতা, সুবর্ণবর্ণা, নানা অলংকার শোভিতা, দশভুজা, দশপ্রহরণধারিণীতার অন্যতম একটি ঘণ্টা। প্রচণ্ড বিক্রম এই ঘণ্টাধ্বনির। এর শব্দেই অসুরসৈন্যেরা নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল।” চন্দ্রঘণ্টা দেবীর মন্দির চৌক থানার ঠিক বিপরীতে চন্দু নাউ (নাপিত)-এর গলি, সি.কে ২৩/৩৪ নম্বর বাড়ি। প্রাচীন এই দেবীর প্রতিমা পাথরের প্রায় ফুটখানেকের মতো। ডক্টর তপন কুমার ঘোষ মহাশয় বলেন, দেবীর সম্বন্ধে কথিত যে ইনি বৌদ্ধদেবী চিত্রঘণ্টা এবং এই প্রতিমা সারনাথ থেকে এখানে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই সম্বন্ধে সারনাথ প্রাপ্ত স্থিরপাল এবং বসন্ত পালের ১০২৬ খৃঃ শিলালেখ উল্লেখযোগ্য। বাংলার সম্রাট গৌড়াধিপ মহীপালের আদেশে স্থিরপাল ও তার অনুজ বসন্তপাল বারাণসীতে ঈশানেশ্বর ও চিত্রঘণ্টা এবং আরো শতাধিক মন্দিরের নির্মাণ করেন। লোকের ধারণা স্থিরপাল ও বসন্ত পালের স্থাপিত চিত্রঘন্টাই আজ হিন্দু দেবী রূপে পূজিতা।  শ্রীশ্রী চণ্ডী বা দেবী সপ্তশতীর উত্তর চরিত্রের সূচনায় দেবী চন্দ্রঘণ্টা মহাসরস্বতীর নবদুর্গা অবতারের তৃতীয...

কাশীর দেবী ব্রহ্মচারিণী মন্দির

Image
এই চৈত্র মাসে বাসন্তী পুজোর রীতি বাংলায় আগেই ছিল। কিন্তু বাবু কুলের আয়োজনে আর দেখনদারি প্রতিস্পর্ধায় শারদীয়া পুজোর চলন ঘটেছে । বাবু কুলের প্রভাব কাশী তে পড়ে নি তাই সনাতন রীতি বজায় আছে। নবদুর্গার দ্বিতীয় রূপ দেবী ব্রহ্মচারিণী। ব্রহ্ম হল তপস্যার একটি স্তর। ব্রহ্মচারিণী সেই অর্থে তপস্যাকারী বা তপশ্চারিণী। তার বাসস্থান স্বাধিষ্ঠান চক্রে। ‘ব্রহ্মচারিণী’ নামের অর্থ ‘ব্রহ্মচর্য ব্রত অবলম্বনকারিণী’ বা পালনকারিণী। দেবীর রূপ বলতে, তিনি দ্বিভুজা কিন্তু, ত্রিনয়নী। তাঁর পরনে সাদা শাড়ি ও ফুলের অলঙ্কার। এক হাতে কমণ্ডলু। দেবীর অন্য হাতে জপমালা। তন্ত্রমতে দেবী ব্রহ্মচারিণী ব্রহ্মের প্রতিনিধি রূপে দেবতাদের দর্পও চূর্ণ করেছিলেন। দেবীর ভৈরবের নাম চন্দ্রমৌলীশ্বর। দেবীপুরাণ অনুযায়ী, তিনি সর্ববেদে বিচরণ করেন। আর, সেই কারণেই দেবী পার্বতীরই অপর নাম ‘ব্রহ্মচারিণী’। এক সময় স্বর্গে তর্কসুর অসুরের দাপট, যাকে কেবল শিবের সন্তানই হত্যা করতে পারে।এদিকে কুমারী পার্বতী শিবকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । তার বাবা-মা তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করে, কিন্তু সে অবিচল। দেবতারা কামদেবের কাছে আসেন এবং তাকে ...

কাশীর নবরাত্রি দর্শন

Image
বছরে চারবার আমাদের মাঝে পূজিতা হন মা দুর্গা। চৈত্রে, আষাঢ়ে, শরতে এবং পৌষ মাসে দুর্গাবন্দনা হয়। আদি দুর্গাপুজো কিন্তু চৈত্র মাসে, যা বাসন্তী পুজো নামে আমাদের কাছে পরিচিত। বঙ্গদেশে যেমন শরৎকালের দুর্গাপুজো বিখ্যাত, তেমনই হিন্দি বলয়ে চৈত্র মাসে বাসন্তি নবরাত্রি সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে। কাশীতে নবদুর্গা পূজার চল আছে। চৈত্র মাসে মা ভবানির মন্দির গুলো ভরে থাকে ভক্তে তেমনই প্রায় প্রতি বাড়িতে ঘট পূজা হয়। দেবী দুর্গার আরাধনায় শ্রীরাম চন্দ্রের নামের আগে রাজা সুরথের নাম উল্লেখ রয়েছে। যোদ্ধা হিসাবে রাজা সুরথ ছিলেন খুব দক্ষ। কোন যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হেরে যাননি একদিন প্রতিবেশী রাজ্য তাকে আক্রমণ করলে তিনি পরাজিত হন, এই সুযোগে তার সভাসদরা লুঠপাঠ চালায়। নিজের কাছের লোকেদের এমন আচারনে তিনি অবাক হয়ে যান। এই সময় তিনি ঘুরতে ঘুরতে ঋষি মেধসের আশ্রমে পৌঁছান। ঋষি তাকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা মনের শান্তি পান না। এর মধ্যে একদিন তার সঙ্গে সমাধি বলে একজনের দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন সমাধিকে তার স্ত্রী ও ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, তবুও তিনি বউ ছেলের ভালো-মন্দ এখনও ভেবে চলেছেন।...

মহামিলনের মহামূর্খ মেলা, কাশী

Image
১৯৬৯ সালে মুক্তি পায়ে ভারতের হিন্দি ভাষার একটি ফিল্ম, মৃণাল সেন পরিচালিত এই চলচিত্রের নাম ভুবন সোম।  বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা গল্পের উপর ভিত্তি করে মৃণাল সেন তাঁর এই চলচ্চিত্রটি তৈরি করেছিলেন। ভুবন সোম আধুনিক ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি যুগান্তকারী সৃষ্টি হিসাবে বিবেচিত।  ভুবন সোমকে ভারতীয় নিউ ওয়েভ সিনেমার পথিকৃৎ বলেও মানা হয়। জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার অর্থ সহায়তায় নির্মিত প্রথম দিকের চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। এক কথায় অনন্য। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুহাসিনী মুলে ( গৌরী, একটি গ্রাম্য প্রফুল্ল তরুণীর চরিত্রে ) এবং ভুবন সোম চরিত্রে ভারতীয় চলচিত্রের কাল্ট অভিনেতা উৎপল দত্ত । ভুবন সোম চরিত্রটি অদ্ভুত।সে বিপত্নিক ও নিবেদিতপ্রাণ সিভিল সার্ভেন্ট ভুবন সোম একজন কঠোর, আপোষহীন - ভারতীয় রেলওয়ের "বড় কর্মকর্তা"।  যে শুধু বোঝে কাজ। সে গম্ভীর, মেজাজি, মুখে হাঁসি নেই। তার ছেলে তার থে দূরে সরে গিয়ে চলে গেছে কাশী … । এমন চরিত্র আমরা অহরোহ দেখে থাকি। এ হেন চরিত্রের প্রয়োজন এমন একটা খোলা বাতাস যেখানে সে একটু স্বাভাবিক হবে। এই মানসিক এ...