The Silent Artist
সুখবর জন্য লেখা
মূকতারা নিরঞ্জন
জয়দেব দাস, কাশী
Hoichoi তে the silent artist নামক তথ্যচিত্র এক মাস আগে এলেও, আজ অব্দি সে সাইলেন্ট বজায় রেখেছে। মানে দর্শকের কোন প্রতিক্রিয়া নেই, নেই কোনো সংবাদ! থাকবেই বা কেন? এ তো কোন জনপ্রিয় তারকার সিনেমা নয়; এ এক তারার হলেও সে মূকতারা। মূক শিল্পী। শিল্পি পদ্মশ্রী নিরঞ্জন গোস্বামী।
মূকাভিনয়, যাকে আমরা জানি, দেখে ফিরেছি আমাদের এই বাংলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার প্রচলন খুব বেশী দিনের নয়। পঞ্চাশের দশকের শেষ পাদে বা ছয়ের দশকের আরম্ভে এই শিল্প গুটি গুটি পায়ে চলতে শুরু করেছে। পাশ্চাত্য প্রভাবে। কিছু প্রতিভাবান শিল্পী তাকে প্রাণ দেন। নতুন এক শিল্প চর্চার সূত্রপাত। ভারত উপমহাদেশে মূকাভিনয়ের পথিকৃৎ পশ্চিমবঙ্গ। শ্যামমোহন চক্রবর্তী, যোগেশ দত্ত, অরুণাভ মজুমদার ছিলেন এই পথ চলার যথার্থ কান্ডারী। এই কান্ডারীর মধ্যে এক নাম যোগ করা যায় শ্রী নিরঞ্জন গোস্বামী।
10th জুন ott প্লাটফর্মে রিলিজ করা হয় ‘দ সাইলেন্ট আর্টিস্ট’ তথ্যচিত্র। এক ঘণ্টার তথ্যচিত্র মুকাভিনেতা শ্রী নিরোঞ্জন গোস্বামী কে ঘিরে। এক সাধারণ কিশোরের মাইমের মত অজনপ্রিয় শিল্পের প্রতি ভালবাসা আর তাকে নিয়েই জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত যে কত পরিশ্রমের দাবি রাখে তা এই তথ্যচিত্র না দেখলে বোঝা দায়।
সিনেমার জন্মকাল থেকে সিনেমা প্রধানত দুটি কর্তব্য করে এসেছে-বাস্তবকে হুবহু পর্দায় প্রতিফলিত করা- অনুকরণ না করে-ডকুমেন্টারী ছবির যা ধর্ম। বাস্তবের অনুকরণ করে সজ্ঞান প্রতিরূপ সৃষ্টি দ্বারা কোনো ঘটনা বা ঘটনাবলীকে রূপায়িত করা-যা মূলত আমাদের পক্ষে তৃপ্তিদায়ক কাহিনিচিত্রের যা ধর্ম। ল্যুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথম ছবিটি ছিল হুবহু বাস্তবের প্রতিফলন। চলচ্চিত্রে আদিম শৈশবে সেই স্ল্যাপস্টিক কমেডির যুগ থেকে হলিউডের ছবির প্রায় সমস্ত অংশই হচ্ছে-বাস্তবের অনুকরণে তৈরি কাহিনিচিত্র।
‘দ সাইলেন্ট আর্টিস্ট’ তথ্যচিত্রে কোন কাহিন কে অনুসরণ না করে নিরঞ্জন বাবু কে তাঁর জগতের লোকেরা যেমনটি দেখেছেন, তাঁরই প্রকাশ। যেমন আজকের বাংলা ছবির নায়ক অনির্বাণের কথায়- অভিনয় দেখেছি চোখের সামনে তখন ফেসিনেটেড হয়ে গেছি। ‘মাইমে কে একটা অন্য স্তরে নিয়ে গেছে’ একথা বলেন চিত্র শিল্পি শুভাপ্রসন্ন। তাঁর স্ত্রী মুক্তা গোস্বামী বলেন, একটা মানুষ যে সারাক্ষণ মূকাভিনয়ের মধ্যে থাকে তার বইয়ে সে কোন কিছুতেই নিজেকে ইনভলভ করে না। নিরঞ্জন বাবুর বিষয় আরো অনেকে নিজের অভিজ্ঞতা এই তথ্যচিত্র তুলে ধরেছেন, যেমন প্রবাদ প্রতিম শ্রী জগদীশ দত্ত, নাট্য নির্দেশক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, ভারতীয় চিত্র শিল্পি সমীর মন্ডল, সুপুত্রী মধুরিমা গোস্বামী, পাপেট শিল্পী সুরেশ দত্ত, পিয়াল ভট্টাচার্য্য, ছাউ নৃত্য নাট্য শিল্পী ভূমিকেশ্বর সিংহ ইত্যাদি আরো অনেকে।
ফিল্মের আরম্ভ নিরঞ্জন বাবুর নবরসের প্রদর্শন এক সম্পদ। অভিনয় নানান টুকরো টুকরো অংশ প্রয়োগে নিরঞ্জন বাবুর দক্ষতাকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে এই মাধ্যম। সম্প্রতি তথ্যচিত্রের প্রতি সিনেমা প্রেমীদের আগ্রহ কমেছে। তাই হয়ত সেই সিনেমার প্রতি পরিচালকের অনিহা। অথবা তার ইচ্ছে থাকলেও প্রযোজক পাওয়া শক্ত। তাই এই তথ্যচিত্রের জন্য প্রযোজক কে সাধুবাদ। প্রযোজকের ভূমিকা পালনে ‘অদৃতা দে’র বেশি দিনের অভিজ্ঞতা না হলেও, ঝুঁকি নেবার ক্ষমতার প্রকাশ তার এই ধরনের ফিল্মের দ্বারা পাওয়া গেল। নির্দেশনা ত্রিগুনা শঙ্কর মান্নার।
Comments
Post a Comment