১০১ বর্ষ পূরণে বারাণসীর নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন

১০১ বর্ষ পূরণে বারাণসীর নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন
চৈত্রের বাতাসে শীতের ছোঁয়াটুকু মিলিয়ে যেতেই সম্ভাবনার ডালি নিয়ে নতুন বছরের আবির্ভাবে মন হয় উল্লাসিত। সেই উল্লসিত প্রাণে, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, বারাণসী শাখা ২২শে বৈশাখ ১৪৩১ (ইং ৫ই মে ২০২৪) রবিবার "বর্ষবরণ উৎসব” সন্ধ্যা ৭.০০ ঘটিকায় বারাণসীর দুর্গাচরণ গার্লস্ ইন্টার কলেজ প্রেক্ষাগৃহে (ফরিদপুরা, সোনারপুরা) আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভেই দীপ প্রজ্জ্বলন ও সংগঠন গীত, সমবেত রুপে পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষন “সঙ্গীতাঞ্জলি”। রবীন্দ্রনাথের ভাবধারা কে বহন করা অলক্ষ্যে ছিল তারই গানের স্পর্শ। শিল্পীদের প্রশংসনীয় উপস্থাপনা শুনে গীতি আলেখ্যটি দর্শকদের মনে বিশেষ রেখাপাত করে। 
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরাতন ও নতুনের মেলবন্ধন প্রকাশ পায়। সঙ্গীতানুষ্ঠানে অতিথি শিল্পী রূপে মঞ্চ অলংকৃত করেন বিদুষী সঙ্গীত শিল্পী শ্রীমতী সুচরিতা গুপ্ত, শ্রীমতী পুষ্প ব্যানার্জি, শ্রীমতী ব্রততী দাশগুপ্ত এবং শ্রীমতী পৌলমী। শ্রীমতী শতরূপা রায় চ্যাটার্জী, শ্রীমতী জয়া রায়, শ্রীমতী দেবযানী রায়, শ্রীমতী মেঘা গাঙ্গুলি এবং কুমারী বর্ষা বসাকের মত গুণী শিল্পীরা মিলে সুন্দর গীতি আলেখ্য দর্শক কুলকে উপহার দেয়। যন্ত্র সংগীতে শ্রী গৌতম চক্রবর্তী (তবলা), শ্রী বিশ্বজিত চ্যাটার্জি (গীটার) এবং শ্রীমান শুভংকর ব্যানার্জি (সিন্থেসাইজর), আলেখ্য নির্মাণ, পরিবাশনা, পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি- শ্রীমতি ঝুমুর সেনগুপ্ত।
১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে 'সম্মেলনে'র প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় বারাণসীতে। সেই থেকে বহির্বঙ্গ-সহ বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এই সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশন প্রায় প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রবীন্দ্রনাথের কাছে বহির্বঙ্গের এই সম্মেলনের আমন্ত্রণ ছিল অনেকটা 'নাড়ীর টানে'র মতো। তাঁর কথায়, 'বাঙালি বাংলাদেশে জন্মেছে বলেই যে বাঙালি তা নয়, বাংলাভাষার ভিতর দিয়ে মানুষের চিত্তলোকে যাতায়াতের বিশেষ অধিকার পেয়েছে বলেই সে বাঙালি।' তাই তিনি সেদিন এই সম্মেলনের আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, 'আজকের প্রবাসের এই বঙ্গসাহিত্যসম্মিলনী হঠাৎ আত্মপ্রকাশের জন্য উৎসুক হয়েছে; এই আগ্রহের কারণ হচ্ছে, বাঙালি আপন প্রাণ দিয়ে একটি প্রাণবান সাহিত্যকে গড়ে তুলেছে।' তাছাড়া উত্তর ভারতের মতো হিন্দিভাষী অঞ্চলে বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সূচনা হওয়ায় তিনি মনে করেছিলেন, 'এতে বাঙালিদের এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।’
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বহু বিশিষ্টজন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন বা আছেন। সম্মেলনের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তাঁরা চেষ্টা করেছেন সারা দেশে বাঙালির আত্মমর্যাদা রক্ষার সাথে সাথে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রসার ও উন্নয়নে।
বারানসী শাখার সভাপতি অত্যন্ত গর্বের সহিত ঘোষনা করেন যে এ বৎসর বারানসী শাখা বাংলা শিক্ষা প্রদান প্রকল্পে সবর্বভারতীয় স্তরে ১১টি পুরস্কার প্রাপ্ত করেছে যা নিসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। 
সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালন ছিলেন শ্রী দেবাশিষ দাশ মহাশয়। সহযোগিতা করেছেন শ্রী মুরারী মোহন সেনগুপ্ত, শ্রী শ্যামাপ্রসাদ রায়, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য ও বিকাশ বল্লভ। সার্বশেষে সম্মেলনের সচিব শ্রীমতী শতরূপা রায় চ্যাটার্জী মহাশয়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Comments

Popular posts from this blog

আচার্য ভরত প্রস্তাবিত অভিনয়রীতি

কাশীর বাঙালী টোলার দ্বীতিয় পাতালেশ্বর