কাশীতে বিপ্লবী - সিদ্ধযোগী কালীপদ গুহরায়


বিপ্লবী - সিদ্ধযোগী কালীপদ গুহরায়

কাশীর মানসরবর ঘাটের ওপর এক বাড়ির নাম ' মানসরবর '। এই বাড়ির একটি ঘর সাক্ষী হয়ে আছে সিদ্ধযোগী কালীপদ গুহরায় মহাশয়ের কাশী বাসের।

প্রথম জীবনে তিনি একজন বিপ্লবী ছিলেন। পরবর্তী জীবনে সাধনা বলে সিদ্ধযোগী হয়েছিলেন। আনন্দময়ী মা, মহামহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজ এবং কাশী-নরেশ পর্যন্ত সবাই ভালোবাসতেন অথবা শ্রদ্ধা করতেন তাঁকে। 

কালীপদ গুহ রায় জন্ম ১৯০২ সালে, কেন্দুয়া-ফরিদপুর অঞ্চলে। ভারতচন্দ্ৰ। মাদারীপুর হাইস্কুল থেকে প্ৰবেশিকা পাশ করে কলিকাতার আশুতোষ কলেজ, রংপুর কলেজ ও দৌলতপুর কলেজে অধ্যয়ন করেন। অল্প বয়স থেকেই বিপ্লবী যুগান্তর দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩০ খ্রী. থেকে আট বছর কারারুদ্ধ থাকেন। 
Cellular জেলের এক ফলকে ভারতীয় বিপ্লবীদের নাম তালিকায় তার নাম খোদিত আছে।

মুক্তিলাভের পর সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতায় মন দেন। যৌবনে নিজ সম্পাদনায় ‘চক্ৰবাক’ নামে একটি সাময়িক পত্রিকা প্ৰকাশ করেছিলেন। কিছুদিন বন্ধু কাজী নজরুল-সম্পাদিত ‘নবযুগ’-এর সম্পাদকমণ্ডলীর প্রধান হিসাবে কাজ করেন। ইংরেজী ও বাংলা উভয় ভাষাতে কবিতা লিখতে এবং বক্তৃতা দিতে পারতেন। অধ্যাত্ম-বিষয়ক পত্রিকা ‘হিমাদ্রি’র তিনি প্ৰতিষ্ঠাতা।

শেষজীবন যোগ-সাধনায় কাটান। সাধকমহলে ‘যোগীশ্বর’ আখ্যায় ভূষিত হন। তাঁর যোগ সাধনার সম্পর্কে এবং অনেক অলৌকিক ঘটনার কথা প্রচলিত আছে। এক সময় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সেই সব অলৌকিক ঘটনা ক্রমাগত বের হত।

১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের এক ঘটনার কথা জানা যায়। বিগতযুগের এক বিখ্যাত চিত্র পরিচালক ছিলেন কালিপদাবাবুর একজন বন্ধু ও ভক্ত। ১৯৭০ সালে সেই চিত্র পরিচালক তখন বৃদ্ধ এবং খুবই অসুস্থ। ডাক্তার জবাব দিয়ে গিয়েছে। ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতিনারা সবাই সে বাড়িতে উপস্থিত। মৃত্যুপথযাত্রী পরিচালক অচৈতন্য অবস্থায় শেষ শয্যায় শায়িত।

রাত তখন তিনটে। তাঁর এক তরুণ দৌহিত্র সেই ঘরে একা। অন্যান্য পরিবার-পরিজন শোকস্তব্ধ বাড়ির এঘরে-ওঘরে ঘুমিয়ে কিম্বা জেগে রয়েছেন।

অচৈতন্য পরিচালকের পাশে বসে দৌহিত্র দাদুর পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঘরে মৃদু আলো। খাটের অনতিদূরে একখানি টেবিল। তাতে বইখাতা আর ওষুধপত্রের সঙ্গে পৃথক পৃথক ফ্রেমে তিনখানি পোস্টকার্ড সাইজের ছবি—–রমণ মহর্ষি, বালানন্দ।ব্রহ্মচারী এবং কালিপদ গুহরায়। তিনজনেই তখন মর্তলীলা সংবরণ করেছেন।

সহসা দৌহিত্র একটা তীব্র আলো দেখে চমকে উঠল। সে স্পষ্ট দেখতে পেলো, কালিপদবাবুর ছবি থেকে একটা জ্যোতি বেরিয়ে এসে পরিচালকের বুকের ওপর পড়ল। 

ভয়ে ও বিস্ময়ে বিভ্রান্ত দৌহিত্র তাড়াতাড়ি পেছিয়ে আসে কয়েক পা। আর তখুনি সেই সুতীব্র জ্যোতির মাঝে দেখতে পায় কালিপদবাবুকে। তিনি পরিচালকের পাশে বসে তাঁর বুকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। 

কেবল কয়েকটি মুহূর্ত। তারপরেই কালিপদবাবু অদৃশ্য হয়ে গেলেন। সেই সুতীব্র জ্যোতিটি পরিচালকের বুক থেকে ফিরে গেল কালিপদবাবুর ফটোখানির ভেতরে।

বিস্ময় আর উত্তেজনায় হতবাক দৌহিত্র শুধু অপলক নয়নে তাকিয়ে রইল সেই ফটোখানির দিকে। কিন্তু সেখানি যে ততক্ষণে আবার আগের মতো ছবি, কেবলি ছবি ।

সেখানেই শেষ নয়। একটু বাদেই দৌহিত্র দেখতে পেলো, পরিচালক চোখ মেললেন। তিনি উঠে বসে স্বাভাবিক স্বরে জিজ্ঞেস করলেন—কিরে, তুই কখন এলি ? যেন ঘুম থেকে জেগে উঠে নাতিকে দেখে দাদু জিজ্ঞেস করছেন। 

ভাগনের ডাক শুনে মামা-মামী, মাসি মেসো এবং বাড়ির সবাই ছুটে এলো সে ঘরে। তারাও পরিচালককে ঐভাবে বসে থাকতে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।

অবাক হলেন পরিচালক নিজেও। বলে উঠলেন— সেকি! তোরা সবাই দেখছি। এখানে! কবে এলি ? কি ব্যাপার ? কেউ তাঁর সে প্রশ্নের ঠিকমত উত্তর দিতে পারে না। কোন রকমে গোঁজামিল। দিয়ে সে ঘর থেকে পালিয়ে বাঁচে।

ঘড়ি দেখেন পরিচালক। তারপরে আবার শুয়ে পড়েন। এবং তখন তিনি সেঘরে একা।

খবর পেয়ে পরদিন সকালেই ডাক্তার ছুটে আসেন। পরিচালক আপত্তি করা সত্ত্বেও তাঁকে খুটিয়ে খুটিয়ে পরীক্ষা করেন। তারপরে পাশের ঘরে এসে মন্তবা করেন—ডাক্তারী শাস্ত্র অনুযায়ী এমন ঘটনা সম্ভব নয়। 

অথচ তারপরেও পরিচালক প্রায় বছরখানেক বেঁচেছিলেন।

জয়দেব দাস, কাশী

Comments

Popular posts from this blog

আচার্য ভরত প্রস্তাবিত অভিনয়রীতি

কাশীর বাঙালী টোলার দ্বীতিয় পাতালেশ্বর