কাশীর হৃদয়কেন্দ্র জ্ঞানব্যাপীমন্দির ভাস্কর্যের আরেক নজির

কাশীর হৃদয়কেন্দ্র জ্ঞানব্যাপী
মন্দির ভাস্কর্যের আরেক নজির
জয়দেব দাস, কাশী
মিঃ ই. বি. হ্যাভেল ছিলেন একজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। তিনি তাঁর স্বদেশ ইংল্যাণ্ড থেকে ১৮৯৬ সালে ভারতে এসেছিলেন। তিনি এ-দেশে এসে ভারতশিল্পের ধারাবাহিক ইতিহাস অনুসন্ধানে মগ্ন হয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই সে-বিষয়ে একজন বিশিষ্ট সমঝদার ও শিল্প ইতিহাসবেত্তা হয়ে ওঠেন।
ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে বারাণসী বা কাশীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ঐতিহ্যপূর্ণ এই সুপ্রাচীন নগরীর বহু অজানা তথ্য মিঃ ই. বি. হ্যাভেল ' বেনারস দ সেক্রেড সিটি' নামে একটি গ্রন্থের মাধ্যমে আমাদের কাছে উন্মোচিত করেছেন।
হ্যাভেল সাহেব সেই বই এর একদশ অধ্যায়ে ভারতীয় ভাস্কর্যের উল্লেখ করেন এবং প্রাচীন মন্দির গাত্রে উৎকীর্ণ শিল্পের চিন্তা ব্যাক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, কয়েকজন সুশিক্ষাপ্রাপ্ত পুরাতত্ত্ববিদ যদি বারাণসীর চারদিকে ছড়ানো এবং আধুনিক মন্দিরগুলিতে গ্রথিত ভাস্কর্যকলার নিদর্শনরাজি ও প্রাচীন ধ্বংসস্তূপগুলি গভীরভাবে পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করেন, তাহলে এই শহরটির সুপ্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক নতুন আলোকপাত করতে পারবেন। অদ্যাবধি এই কাজের দায়িত্ব ইউরোপীয়দের উপরে ন্যস্ত রয়েছে। অথচ তাঁদের হিন্দু শিল্পের মর্ম বিশ্লেষণ করার মত সম্যক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাব।
জ্ঞানব্যাপী মন্দিরের বিষয় হ্যাভেল সাহেব সেই গ্রন্থে যা বলেছেন সেটি এই রকম, প্রাচীন স্থাপত্য কলার নিদর্শন যা বারাণসীতে আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মনোরম ও আকর্ষণীয় হল মুসলমান আক্রমণে বিধ্বস্ত ও রূপান্তরিত সৌধরাজি। স্বর্ণমন্দিরের (বিশ্বনাথ মন্দির) কাছেই ঔরঙ্গজেব মসজিদের পেছনে একটি প্রাচীন স্থাপত্যের ভাঙাচোরা রূপ দেখা যায়। তা একদা অবশ্যই অতি জমকালো ও চিত্তাকর্ষকরূপের কোন ব্রাহ্মণ্য বা জৈন মন্দির ছিল। মসজিদের দক্ষিণ দিকের দেওয়াল তার উপরে ভর করেই গড়ে উঠেছে। প্রচলিত মতানুসারে উহা সেই পুরানো মূল বিশ্বেশ্বর মন্দিরেরই অংশ। সেই মূল প্রাচীন মন্দিরটি ঔরঙ্গজেব কর্তৃকই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। স্থাপত্য রীতি দেখে মনে হয় মসজিদটি আকবরের সময়কার অথবা ষোল শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত। মসজিদের সামনে যে উঁচু চত্বর আছে তা পুরাতন কোন কাঠামো বা ভিতের উপরে তৈরি হয়েছিল।
জ্ঞানব্যাপী মন্দির গাত্রে উৎকীর্ণ সেই ভাস্কর্যের দ্বারা প্রাচীন ভারতের শিল্প এর এক ধারণা করা সম্ভব। পর্যটকের তারই টানে কাশী আসেন। মন্দির গাত্রে ত্রিশূল, পান ইত্যাদি হিন্দু ধর্মীয় চিন্হ আজও বর্তমান। 
কাশীতে তীর্থযাত্রী সমাগম বর্তমানে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এ সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে, উত্তর প্রদেশ সরকার একটি কাশী দর্শন প্রকল্প আরম্ভ করেছে।
তীর্থযাত্রীদের জন্য আরম্ভহ করা এই সিদ্ধান্ত-এ খুবি সুবিধা হবে পর্যটক কুলেরও। বারাণসীতে পাঁচশো টাকার নামমাত্র মূল্যে সাতটি স্থান পরিদর্শন করতে সক্ষম হবে পর্যটকরা।
বারাণসীর ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশনের অনতি দূরে থাকা আন্তরজাতিক বাস পরিসেবা থেকে এই যাত্রা শুরু হবে। স্টেশনে বুকিংও করা যাবে। বৈদ্যুতিক এসি বাস করে তীর্থযাত্রীদের কাশীর সাতটি ধর্মীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যাবে। এবং দিনের শেষে ফিরে আসবে। যার মধ্যে রয়েছে কাশী সারনাথ, নমো ঘাট, কাল ভৈরব মন্দির, বিশ্বনাথ মন্দির, দুর্গা মন্দির এবং সংকট মোচন মন্দির। বিশ্বনাথ মন্দির দর্শনের সময় চোখে পড়বে সেই জ্ঞানব্যাপী মন্দিরের শিল্প ও ভাস্কর্য।

Comments

Popular posts from this blog

আচার্য ভরত প্রস্তাবিত অভিনয়রীতি

কাশীর বাঙালী টোলার দ্বীতিয় পাতালেশ্বর